ভারতের খেলার রাজনীতিতে বাংলাদেশের ভূমিকা: নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে?

ঢাকা, ২০ জুলাই ২০২৫ – ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রীড়া রাজনীতির দীর্ঘ ইতিহাসের পাশাপাশি এবার বাংলাদেশের নামও যুক্ত হচ্ছে কিনা, তা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং ক্রীড়া সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো এই আলোচনাকে আরও জোরদার করছে। বিশেষ করে, ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর স্থগিত এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ঢাকায় আয়োজন নিয়ে ভারতের আপত্তি এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখযোগ্য।

ভারতের সফর স্থগিত: রাজনৈতিক প্রভাব

গত ২ জুলাই বিবিসি বাংলা জানায়, ভারতীয় ক্রিকেট দলের আগস্টে বাংলাদেশ সফরে তিনটি ওয়ানডে এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার কথা ছিল। কিন্তু ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দুই দেশের মধ্যে শীতল কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে ভারত এই সফরে সম্মতি দেয়নি। সূত্রটি আরও জানায়, বাংলাদেশে ভারতীয় দলের সফর এই মুহূর্তে ইতিবাচক বার্তা দেবে না। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এবং সমর্থকদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করেছে। বিসিবি সূত্র জানায়, তারা এই ফাঁকা সময়ে বিকল্প সিরিজ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।

এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের বার্ষিক সাধারণ সভা ২৪ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (বিসিসিআই) ঢাকায় বৈঠকে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং ঢাকা থেকে ভেন্যু পরিবর্তন না করলে ২০২৫ সালের টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ আয়োজন বাতিলের হুমকি দিয়েছে। এই হুমকি ভারত-পাকিস্তান ক্রীড়া রাজনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের অবস্থানকেও আলোচনায় এনেছে। এসিসি’র বর্তমান সভাপতি মহসিন নাকভি, যিনি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান, এই বৈঠকের জন্য ঢাকা নির্বাচন করেছেন, যা ভারতের আপত্তির মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক গত কয়েক মাসে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে। এই উত্তেজনা ক্রীড়া ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে। ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণার অভিযোগ উঠেছে, যা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সমালোচিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের ক্রিকেট সফর বাতিল এবং এসিসি বৈঠক নিয়ে অবস্থানকে অনেকে রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোও এই বিষয়ে বিভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের সঙ্গে জনগণের এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক চাই। কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি এবং পরস্পর নির্ভরশীলতা বাড়ানো উভয় দেশের জন্য উপকারী।” জামায়াতে ইসলামী, যারা ঐতিহাসিকভাবে ভারতের প্রতি সমালোচনামূলক অবস্থান নিয়ে থাকে, তারাও সাম্প্রতিক ইস্যুতে সতর্ক বক্তব্য দিচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রীড়া রাজনীতি দীর্ঘদিনের, যেখানে ক্রিকেট ম্যাচগুলো প্রায়ই জাতীয়তাবাদী উত্তেজনার প্রতীক হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ এই রাজনীতিতে অতীতে সরাসরি জড়ায়নি, তবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা ও ছিটমহল ইস্যুর কারণে জনমনে ভারতের প্রতি অসন্তোষ রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং ভারতের সফর বাতিলের সিদ্ধান্ত ক্রীড়া ক্ষেত্রে একটি নতুন রাজনৈতিক মাত্রা যোগ করছে।

প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “পরপর তিনটি ক্রীড়া আয়োজনে বাংলাদেশের অবস্থান কী বার্তা দিচ্ছে?” এই প্রশ্নটি বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবের সম্ভাবনাকে আরও স্পষ্ট করে। বিশেষ করে, এশিয়া কাপের ভেন্যু নিয়ে ভারতের হুমকি এবং বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া এই আলোচনাকে আরও তীব্র করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ইস্যু নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। একজন সমর্থক এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “ভারতের এই সিদ্ধান্ত ক্রিকেটের চেয়ে রাজনীতির দিকে বেশি ঝুঁকছে। বাংলাদেশের মাটিতে খেলতে না চাওয়া তাদের দুর্বলতা।” আরেকজন লিখেছেন, “ক্রিকেট হোক খেলার জন্য, রাজনীতির জন্য নয়।” এই বিভক্ত জনমত ক্রীড়া ও রাজনীতির মিশ্রণের জটিলতাকে তুলে ধরছে।