জুলাই শহীদদের স্মরণে দেশের ৮৬৪ স্থানে ফলক স্থাপনের ঘোষণা: উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম

ঢাকা, ১৬ জুলাই ২০২৫ – ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশের ৮৬৪টি স্থানে স্মৃতিফলক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বীর প্রতীক। এই উদ্যোগের মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মৃতি ও তাদের আত্মত্যাগকে চিরস্মরণীয় করে রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে সরকার।

উপদেষ্টার ঘোষণা

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর একটি সংবাদ সম্মেলনে ফারুক-ই-আজম বলেন, “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই শহীদদের সম্মানে দেশের ৮৬৪টি স্থানে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হবে, যা তরুণ প্রজন্মের কাছে গণতন্ত্র ও ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে থাকবে।” তিনি আরও জানান, এই ফলকগুলো স্থানীয় প্রশাসন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ে স্থাপন করা হবে।

প্রকল্পের বিবরণ

এই উদ্যোগের আওতায় দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় শহীদদের নাম, তারিখ এবং গণঅভ্যুত্থানের তাৎপর্য তুলে ধরে ফলক স্থাপন করা হবে। প্রাথমিকভাবে ৮২৬ জন শহীদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, এবং ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত আরও শহীদ ও আহতদের তথ্য সংগ্রহের জন্য আবেদন গ্রহণ চলছে। ফারুক-ই-আজম জানান, প্রতিটি ফলক স্থানীয় শহীদদের নাম ও তাদের অবদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ সংরক্ষণ করবে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে কাজ করবে।

তিনি বলেন, “এই ফলকগুলো শুধু স্মৃতিচিহ্ন নয়, বরং একটি ন্যায়সঙ্গত সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তরুণদের লড়াইয়ের প্রতীক। আমরা চাই, প্রতিটি ফলক তরুণদের মনে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তুলুক।”

গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়। এই আন্দোলনে পুলিশ, র‍্যাব এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর হামলায় শতাধিক ব্যক্তি শহীদ হন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হন। এই ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ফারুক-ই-আজম, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নৌ কমান্ডো হিসেবে অপারেশন জ্যাকপটে অংশ নিয়ে বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারাবাহিকতা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়েছিলাম, আর ২০২৪ সালে তরুণরা গণতন্ত্র ও ন্যায়ের জন্য রক্ত দিয়েছে। এই দুই ঘটনা একই চেতনার প্রকাশ।”

সরকারের অন্যান্য উদ্যোগ

উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম জানান, শহীদদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। অনেককে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সরকার কাজ করছে। তিনি বলেন, “আমরা আশাবাদী, শহীদদের রক্তের মূল্য ন্যায়বিচারের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে।”

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় শহীদ ও আহতদের তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীনে গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত বিশেষ সেল জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ৮২৬ জন শহীদ এবং ১১,৩০৬ জন আহত ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।

জনগণের প্রতি আহ্বান

ফারুক-ই-আজম সকল নাগরিককে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং ফলক স্থাপনের কাজে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এই ফলকগুলো আমাদের ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণে সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।”