পটুয়াখালী, ১৪ জুলাই ২০২৫ – বঙ্গোপসাগর থেকে অভূতপূর্ব ৬৫ মণ ইলিশ ধরে উপকূলে ফিরেছে পটুয়াখালীর একটি ট্রলার। রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর মৎস্য বন্দরে এই ইলিশ নিলামে বিক্রি হয়েছে ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এই ঘটনা স্থানীয় জেলে ও ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি করেছে।
‘এফ বি সাদিয়া-২’ নামের ট্রলারটি গত ৯ জুলাই ২৩ জন জেলে নিয়ে আলীপুর ঘাট থেকে সাগরে মাছ ধরতে যায়। ট্রলারের মাঝি মো. শাহাবুদ্দিন জানান, সমুদ্রের বিভিন্ন এলাকায় জাল ফেলে তারা এই বিপুল পরিমাণ ইলিশ সংগ্রহ করেন। রোববার দুপুরে ঘাটে ফিরে মাছগুলো মেসার্স খান ফিশ নামের আড়তে নিলামে তোলা হয়।
মাছগুলো তিনটি আকারে বিভক্ত করে বিক্রি করা হয়। ১ কেজি ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৯৫ হাজার টাকা, ৬০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৭০ হাজার টাকা এবং ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মণপ্রতি ৫৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। এই বিশাল আয় জেলেদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।
মেসার্স খান ফিশের ব্যবস্থাপক সাগর ইসলাম বলেন, “অনেক দিন ধরে সাগরে মাছ ধরা কম হচ্ছিল। বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এই ৬৫ মণ ইলিশ ধরার ঘটনা জেলেদের পূর্বের লোকসান কিছুটা পুষিয়ে দিতে সহায়তা করবে।” তিনি আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় জেলেরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন।
তবে, দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে ইলিশের দাম এখনও আকাশচুম্বী। বরিশাল ও পটুয়াখালীর বাজারে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ কেজিপ্রতি ১,৯০০ টাকা এবং ৮০০ গ্রামের ইলিশ ২,৩০০ থেকে ২,৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সাগরে সিগন্যালের কারণে জেলেরা প্রায়ই মাছ ধরতে যেতে পারছেন না, যা সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
মৎস্য বিভাগের ভূমিকা
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, “দীর্ঘদিন সাগরে যেতে না পারার কারণে ইলিশের সরবরাহ কম ছিল। তবে এখন মাছ ধরা শুরু হয়েছে, এবং সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে। আমরা বাজারে সিন্ডিকেট রোধে নজরদারি করছি।” তিনি আরও বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেরা মাছ ধরছেন, যা বড় আকারের ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে।
ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে, বৈরী আবহাওয়া এবং সাগরের উত্তাল অবস্থার কারণে চলতি মৌসুমে ইলিশের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে, বাজারে ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। এই ৬৫ মণ ইলিশ ধরার ঘটনা জেলেদের জন্য একটি বড় সাফল্য হলেও, সাধারণ ক্রেতাদের জন্য দাম এখনও উচ্চ।
এই ঘটনা স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে। আগ্রহী পাঠকরা বিস্তারিত তথ্যের জন্য পটুয়াখালী মৎস্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।