টোকিও, ১৩ জুলাই ২০২৫ – জাপানের গবেষকরা ইন্টারনেটের গতিতে নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন, যা ডিজিটাল জগতের ভবিষ্যৎকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজি (এনআইসিটি) এবং সুমিটোমো ইলেকট্রিকের গবেষকদের একটি দল ১.০২ পেটাবিট প্রতি সেকেন্ড (পিবিপিএস) বা ১০,২০,০০০ গিগাবিট প্রতি সেকেন্ড গতিতে ডেটা স্থানান্তর করেছে, যা বর্তমান গড় ইন্টারনেট গতির তুলনায় লাখ গুণ দ্রুত। এই গতিতে নেটফ্লিক্সের সম্পূর্ণ লাইব্রেরি বা স্টিমের সব গেম মাত্র এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে ডাউনলোড করা সম্ভব।
কীভাবে সম্ভব হলো এই অর্জন?
এনআইসিটি’র ফোটোনিক নেটওয়ার্ক ল্যাবরেটরির নেতৃত্বে এই পরীক্ষায় ১৯-কোর অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ব্যবহার করা হয়েছে, যার ব্যাস বর্তমানে ব্যবহৃত স্ট্যান্ডার্ড ফাইবার ক্যাবলের সমান (০.১২৫ মিমি)। এই ক্যাবলটি ১৯টি পৃথক আলোর পথ বা “কোর” ব্যবহার করে ডেটা স্থানান্তরের ক্ষমতা বাড়িয়েছে, যাকে গবেষকরা “১৯ লেনের সুপারহাইওয়ে” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া, ১৮০টি ভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে এবং উন্নত সিগন্যাল পরিবর্ধন প্রযুক্তির মাধ্যমে এই অভূতপূর্ব গতি অর্জিত হয়েছে। পরীক্ষায় ডেটা ১,৮০৮ কিলোমিটার (১,১২৩ মাইল) দূরত্বে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা বিশ্বের দীর্ঘতম দূরত্বে পেটাবিট-স্তরের ডেটা স্থানান্তরের রেকর্ড।
এর তাৎপর্য কী?
এই গবেষণাটি ৪৮তম অপটিক্যাল ফাইবার কমিউনিকেশন কনফারেন্সে (ওএফসি ২০২৫) উপস্থাপন করা হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তি বর্তমান ফাইবার অপটিক অবকাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ভবিষ্যতে এর বাস্তবায়নকে সহজ করবে। এই গতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ৬জি নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি), এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো ডেটা-নির্ভর প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এই গতিতে, উদাহরণস্বরূপ, ১৫০ গিগাবাইটের গেম যেমন কল অফ ডিউটি: ওয়ারজোন বা ১০,০০০টি ৪কে মুভি মুহূর্তের মধ্যে ডাউনলোড করা যাবে। এমনকি এই গতি বর্তমান গড় মার্কিন ইন্টারনেট গতি (২৯০ এমবিপিএস) থেকে প্রায় ৩৫ লাখ গুণ দ্রুত।
কবে পাওয়া যাবে এই গতি?
যদিও এই গতি পরীক্ষাগারে অর্জিত হয়েছে এবং এটি সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এখনই উপলব্ধ নয়, তবে গবেষকরা আশাবাদী যে ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। তবে, এই গতি বাস্তবায়নের জন্য উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন ইথারনেট পোর্ট এবং স্টোরেজ ডিভাইসের প্রয়োজন হবে, যা বর্তমানে ব্যয়বহুল। এনআইসিটি জানিয়েছে, তারা এই প্রযুক্তিকে ট্রান্স-ওশেনিক দূরত্বে এবং আরও দক্ষ পরিবর্ধক প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও উন্নত করার পরিকল্পনা করছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই অর্জন বিশ্বব্যাপী ডেটা ট্রাফিকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবিলায় একটি বড় পদক্ষেপ। এআই, স্বায়ত্তশাসিত যানবাহন, এবং বিলিয়ন বিলিয়ন সংযুক্ত ডিভাইসের যুগে এই প্রযুক্তি ইন্টারনেট অবকাঠামোকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। জাপানের এই গবেষণা ৬জি নেটওয়ার্ক এবং আন্ডারসি ক্যাবলের জন্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে, যা ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল সংযোগকে আরও শক্তিশালী করবে।