মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের পাঁচটি সমঝোতা স্মারক ও তিনটি নোট অব এক্সচেঞ্জ স্বাক্ষর

ঢাকা, ১২ আগস্ট ২০২৫ – বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে গতকাল (১১ আগস্ট) মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং তিনটি নোট অব এক্সচেঞ্জ স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের উপস্থিতিতে এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিগুলো প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, শক্তি, এবং বাণিজ্য সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেবে।

স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক ও নোট অব এক্সচেঞ্জের বিবরণ

১. উচ্চশিক্ষায় সহযোগিতা (নোট অব এক্সচেঞ্জ): মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতো সেরি উতামা হাজি মোহামদ বিন হাজি হাসান এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এই নোট অব এক্সচেঞ্জ স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গবেষণা, ছাত্র বিনিময়, এবং একাডেমিক সহযোগিতা জোরদার হবে।

২. কূটনীতিক প্রশিক্ষণ (নোট অব এক্সচেঞ্জ): দুই দেশের কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণে সহযোগিতার জন্য দ্বিতীয় নোট অব এক্সচেঞ্জ স্বাক্ষরিত হয়। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।

৩. হালাল ইকোসিস্টেমে সহযোগিতা (নোট অব এক্সচেঞ্জ): মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিভাগের উপমন্ত্রী সেনেটর ড. জুলকিফলি বিন হাসান এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিআইডিএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এই নোট স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি হালাল শিল্পে সহযোগিতা এবং বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করবে।

৪. প্রতিরক্ষা সহযোগিতা (এমওইউ): মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাতো সেরি মোহামেদ খালেদ বিন নুরডিন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার জন্য প্রথম সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি বিনিময়, এবং যৌথ মহড়া জোরদার করবে।

৫. তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ও পেট্রোলিয়াম (এমওইউ): মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী দাতুক সেরি আমির হামজা বিন আজিজান এবং বাংলাদেশের শক্তি উপদেষ্টা এম ফৌজুল কবির খান এলএনজি সরবরাহ, অবকাঠামো, এবং পেট্রোলিয়াম পণ্যের ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য দ্বিতীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি বাংলাদেশের শক্তি নিরাপত্তা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

৬. গবেষণা ও কৌশলগত সহযোগিতা (এমওইউ): মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (আইএসআইএস) এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। আইএসআইএস-এর চেয়ারম্যান দাতুক অধ্যাপক ড. মোহদ ফয়েজ আবদুল্লাহ এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

৭. বাণিজ্য ও শিল্প সহযোগিতা (এমওইউ): মালয়েশিয়ার মিমোস সার্ভিসেস এসডিএন বিএইচডি এবং বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। মিমোস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহামদ ফৌজি ইয়াহিয়া এবং বিএমসিসিআই-এর শাব্বির আহমেদ খান এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

৮. বাণিজ্যিক সহযোগিতা (এমওইউ): মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআইএম) এবং বাংলাদেশের ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এনসিসিআইএম-এর প্রেসিডেন্ট দাতো সেরি এন. গোবালাকৃষ্ণান এবং এফবিসিসিআই-এর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

এই চুক্তিগুলো বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত, এবং কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এই সমঝোতাগুলো দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।” মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং এই চুক্তিগুলো আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।”

এক্স প্ল্যাটফর্মে জনগণের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক ছিল। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মালয়েশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতি ও শিক্ষা খাতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।” আরেকজন লিখেছেন, “শক্তি ও হালাল শিল্পে সহযোগিতা বাংলাদেশের বাজারকে বিশ্বের কাছে আরও আকর্ষণীয় করবে।”