ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা ঐতিহাসিক, গণতন্ত্রের উত্তরণের পথ সুগম করবে: বিএনপি

ঢাকা, ৬ আগস্ট ২০২৫ – বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনপি) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জুলাই ঘোষণা এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। দলটি এই পদক্ষেপকে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার এবং জাতীয় ঐক্যের দিকে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছে। গতকাল (৫ আগস্ট) প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গতকাল রাতে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের বাইরে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা জুলাই ঘোষণা এবং ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানাই। এটি গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের দিকে ইতিবাচক পদক্ষেপ।” তিনি আরও বলেন, “এই ঘোষণা দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে এবং গণতন্ত্রের পথ সুগম করতে সহায়ক হবে।”

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশানে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে। জুলাই ঘোষণা এই প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা। আমরা এটিকে স্বাগত জানাই।” তিনি বলেন, “এই ঘোষণার মাধ্যমে সমতা, মানবিক মূল্যবোধ এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।”

জুলাই বিপ্লবের স্মরণ

গতকাল ছিল জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী, যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এই উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, “জুলাই বিপ্লবের চেতনা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।” তিনি নির্বাচন কমিশনকে ফেব্রুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে, রমজান মাস শুরুর আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য অনুরোধ করবেন বলে জানান।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “৫ আগস্ট ২০২৫ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত বাংলাদেশের প্রথম বছর পূর্তি। এই স্বাধীনতা হাজার হাজার ছাত্র এবং জনগণের ১৬ বছরের অক্লান্ত সংগ্রাম ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। আমি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।” তিনি জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর আন্দোলনে শহীদ, আহত এবং স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হওয়া গণ-অভ্যুত্থান শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটায়। এরপর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাংবিধানিক ও নির্বাচনী সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। বিএনপি এই সংস্কার প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেছে এবং দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিল এবং টানা তিনটি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল। তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতিকরণ করেছিল, ব্যাংক লুট করেছিল, শেয়ারবাজার ধ্বংস করেছিল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাত্রলীগের আখড়ায় পরিণত করেছিল।” তিনি ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ঘোষণাকে রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন।

জনমত ও প্রতিক্রিয়া

এক্স প্ল্যাটফর্মে সাধারণ মানুষ এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ঘোষণা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য নতুন আশার আলো। বিএনপির সমর্থন এই প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে।” আরেকজন লিখেছেন, “জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। আমরা একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।”

ক্রিকেট বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক আহমেদ রিয়াদ বলেন, “এই নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। বিএনপির সমর্থন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টা দেশে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি করেছে।”

নির্বাচনী প্রস্তুতি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ, এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ১২০ মিলিয়নের বেশি ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কাজ করছে।

এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগের নেতাদের জুলাই গণহত্যার জন্য বিচারের মুখোমুখি না হলে তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করেছেন।