উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলের ভবনে বিমান বিধ্বস্ত, একজনের মৃত্যু, বহু হতাহতের আশঙ্কা

ঢাকা, ২১ জুলাই ২০২৫ – রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে আজ সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষের হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন (আইএসপিআর) জানিয়েছে, দুর্ঘটনাটি দুপুর ১:০৬ টায় সংঘটিত হয়।

দুর্ঘটনার বিবরণ

আইএসপিআরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিমানটি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান ছিল, যা উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান ক্যাম্পাসের একটি ভবনে আছড়ে পড়ে। বিধ্বস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানে আগুন ধরে যায়, যা পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, জরুরি উদ্ধারকারী দল আগুন নেভাতে তৎপর হয়েছে, এবং ছাত্র-শিক্ষকরা আতঙ্কিত অবস্থায় এলাকা ত্যাগ করছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডেপুটি কমিশনার মহিদুল ইসলাম জানান, “একটি যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন কলেজের দিয়াবাড়ী এলাকার একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, উদ্ধার কার্যক্রম চলছে এবং হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের ডিউটি অফিসার লিমা খানম জানান, দুপুর ১:১৮ টায় দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর তিনটি ফায়ার ফাইটিং ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে, তবে ভবনের ক্ষতি এবং হতাহতের পরিমাণ এখনো পুরোপুরি নির্ধারণ করা যায়নি।”

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় প্রচণ্ড শব্দ হয় এবং ভবনের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী এক্স প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “মাইলস্টোন স্কুলের ক্লাসরুমে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক ছাত্র আহত হয়েছে বলে শুনেছি।” আরেকজন লিখেছেন, “উত্তরা দিয়াবাড়ী মাইলস্টোন ক্যাম্পাসের পাশে বিমান ক্র্যাশ করেছে। বিল্ডিং ভেঙে গেছে।”

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ধোঁয়া ও আগুনের মধ্যে ছাত্র-শিক্ষকরা আতঙ্কিত অবস্থায় ছুটোছুটি করছেন। এক্সে একটি পোস্টে বলা হয়, “ঢাকায় মাইলস্টোন স্কুলের মেইন ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত। হতাহতের শঙ্কা অনেক।”

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব এবং ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পুরান ঘালে, যিনি প্রথম উদ্ধারকারী দলের মধ্যে ছিলেন, জানান, “বিমান প্রকৌশলীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় উদ্ধার কার্যক্রমে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।”

বাংলাদেশ বিমানবাহিনী জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ জানতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগে কোনো চূড়ান্ত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকছে কর্তৃপক্ষ।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি জরুরি বিবৃতি জারি করে বলেছে, “আমরা এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত। আমাদের প্রধান ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আমরা সকল ছাত্র-শিক্ষকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছি।” তারা আরও জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছাত্রদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় স্কুলে ক্লাস চলছিল, এবং আগুন ও ধোঁয়ার কারণে অনেকে ভবনের মধ্যে আটকা পড়েছিলেন। স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, “এত বড় দুর্ঘটনা আমরা কখনো দেখিনি। শিশুদের চিৎকার শুনে আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে।”

উত্তরায় এর আগেও বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। ২০০৫ সালের ৭ জুন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ এমবি প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার ফায়েদাবাদ এলাকায় একটি টিনশেড বাড়িতে বিধ্বস্ত হয়, যাতে একজন নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছিল। সেই ঘটনায় পাইলট প্যারাশুটে নিরাপদে অবতরণ করেছিলেন।

২০১৯ সালে পারাবত ফ্লাইং অ্যাকাডেমির একটি সেসনা-১৫০ বিমান উত্তরা মডেল টাউনের একটি খেলার মাঠে বিধ্বস্ত হয়, যাতে পাইলট মোকলেসুর রহমান সাকিব নিহত হন। এই ঘটনাগুলো উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুর্ঘটনা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মাইলস্টোন স্কুলে এমন দুর্ঘটনা অকল্পনীয়। সরকারের উচিত বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।” আরেকজন লিখেছেন, “শিশুদের স্কুলে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত তদন্ত ও দায়ীদের শাস্তির দাবি জানাই।”

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা উত্তরার বাসিন্দা এবং মাইলস্টোন স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সরকার এবং বিমানবাহিনীকে এই ঘটনার কারণ তদন্ত করে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে। হতাহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও বিমানবাহিনী জানিয়েছে, তারা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে পূর্ণ সহযোগিতা করছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আইএসপিআর এবং ফায়ার সার্ভিসের হটলাইনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।