“আমরা আবার গোপালগঞ্জে যাব”: নাহিদ ইসলামের দৃঢ় ঘোষণা

ঢাকা, ১৭ জুলাই ২০২৫ – জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম গোপালগঞ্জে জুলাই পদযাত্রার সমাবেশে দৃঢ় ঘোষণা দিয়েছেন, “আমরা আবার গোপালগঞ্জে যাব। জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায়, প্রতিটি গ্রামে আমরা কর্মসূচি করব।” এই বক্তব্য তিনি গতকাল (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে জুলাই শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এক সমাবেশে দেন, যা জুলাই-আগস্ট ২০২৪ গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পালিত হচ্ছে। এই ঘোষণা দেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

গোপালগঞ্জে সম্প্রতি এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির সময় স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে পড়তে হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাহিদ ইসলাম ও এনসিপির শীর্ষ নেতারা সমালোচনার মুখে পড়েন, এমনকি কেউ কেউ তাদের “পালিয়ে যাওয়ার” অভিযোগ তুলেছেন। এই অভিযোগের জবাবে নাহিদ স্পষ্টভাবে বলেন, “আমরা গোপালগঞ্জে যুদ্ধের আহ্বান নিয়ে যাইনি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জুলাই শহীদদের স্মরণে কর্মসূচি করতে গিয়েছিলাম। বাধা সত্ত্বেও আমরা আবার যাব।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের গণতন্ত্র ও ন্যায়ের লড়াইয়ের প্রতীক। গোপালগঞ্জ হোক বা দেশের যেকোনো প্রান্ত, আমরা ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাব।”

জাতীয় নাগরিক পার্টি গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সারাদেশে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম এবং আখতার হোসেনসহ এনসিপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এই সমাবেশে তারা জুলাই ঘোষণাপত্র এবং দলীয় ইশতেহারের বিষয়ে আলোচনা করেন, যা নতুন বাংলাদেশ গঠনের রূপরেখা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নাহিদ ইসলাম জোর দিয়ে বলেন, “গোপালগঞ্জ আমাদের কাছে শুধু একটি জেলা নয়, এটি আমাদের সংগ্রামের প্রতীক। আমরা প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি উপজেলায় আমাদের বার্তা পৌঁছে দেব।”

নাহিদের এই ঘোষণা এবং গোপালগঞ্জে কর্মসূচির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এনসিপির নেতাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় পালানোর অভিযোগ তুলেছেন। তবে, এনসিপি এবং তাদের সমর্থকরা এই অভিযোগকে ‘মিথ্যা প্রচারণা’ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন। একজন সমর্থক সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “নাহিদ এবং এনসিপি জনগণের পাশে আছে। গোপালগঞ্জে বাধা দেওয়া হলেও তারা পিছু হটবে না।”

অন্যদিকে, স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, গোপালগঞ্জে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তবে নিরাপত্তার কারণে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি প্রশাসন।

নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, গোপালগঞ্জে আগামী দিনে আরও বড় পরিসরে কর্মসূচি পালন করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গোপালগঞ্জের প্রতিটি গ্রামে আমরা পৌঁছাব, জনগণের সঙ্গে একাত্ম হব।” এনসিপি ১৬ জুলাইকে ‘বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস’ এবং ৫ আগস্টকে ‘ছাত্রজনতার মুক্তি দিবস’ হিসেবে পালনের পরিকল্পনা করছে, যার অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জে বিশেষ কর্মসূচি থাকবে।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটায়। এই আন্দোলনে শতাধিক শহীদ এবং হাজার হাজার আহত হন। এনসিপি এই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের দ্বারা গঠিত একটি রাজনৈতিক দল, যারা গণতন্ত্র, সমতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করছে। গোপালগঞ্জ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা হওয়ায়, এনসিপির এই কর্মসূচি বিশেষ রাজনৈতিক তাৎপর্য বহন করে।