বাংলাদেশে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে: আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা

ঢাকা, ১৪ জুলাই ২০২৫ – বাংলাদেশে আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। আজ সোমবার (১৪ জুলাই) সকালে প্রকাশিত সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি এবং নিম্নাঞ্চলে প্লাবনের ঝুঁকি রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস

আবহাওয়াবিদ মো. আজিজুর রহমান জানান, বঙ্গোপসাগরে একটি সুস্পষ্ট নিম্নচাপ সক্রিয় রয়েছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এর ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, খুলনা, এবং পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট এবং রাজশাহী বিভাগেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১৫ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। কিছু এলাকায় ঘণ্টায় ৪০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

সম্ভাব্য প্রভাব

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ভারী বৃষ্টির কারণে নিম্নাঞ্চল, বিশেষ করে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু এলাকায় প্লাবনের ঝুঁকি রয়েছে। পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া, উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের সময় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকা শহরে ইতোমধ্যে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র আলী হোসেন জানান, “আমরা জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। তবে, ভারী বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। নাগরিকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

প্রস্তুতি

আবহাওয়া অধিদপ্তর উপকূলীয় এলাকার জেলেদের গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে এবং স্থানীয় বন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছে।

মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখছি এবং উপকূলীয় এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। জনগণকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস মেনে নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।”

পরামর্শ

  • নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে।

  • জলাবদ্ধতার সম্ভাবনার কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুত রাখতে।

  • আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাসের জন্য বিএমডি’র ওয়েবসাইট (www.bmd.gov.bd) এবং স্থানীয় মিডিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে।

  • জরুরি সহায়তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হেল্পলাইন নম্বর সংরক্ষণ করতে।

প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাত একটি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির ধরন ও তীব্রতা পরিবর্তিত হচ্ছে। গত কয়েক বছরে অতি ভারী বৃষ্টি এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেড়েছে, যা কৃষি, মৎস্যচাষ এবং জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে বর্ষাকালে গড় বৃষ্টিপাত ১৫% বেশি ছিল, এবং এই বছরও একই ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

আগামী দিনগুলোতে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা জনজীবনে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। তবে, সঠিক প্রস্তুতি এবং সতর্কতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা সম্ভব। জনগণকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তা মেনে চলার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য বিএমডি’র ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।